ব্রিটেনে গোলাপগঞ্জ উপজেলা ভিত্তিক কমিউনিটি সংগঠন গড়ে তোলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজ উপজেলার উন্নয়নের পাশাপাশি উপজেলার মানুষের মধ্যে সম্প্রীতি বজায় রাখা। কিন্তু অনেক গুলো সংগঠনে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য গোলাপগঞ্জের কমিউনিটি ক্রমান্বয়ে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠছে। নির্বাচন আসলে সংগঠন গুলো দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ বিভক্তি থেকে কি আমাদের বের হয়ে আসার কোন সুযোগ নেই?
নির্বাচনে গ্রুপিং কিংবা সিন্ডিকেট সমাপ্তির জন্য আমরা নতুন আঙ্গিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছি। এখানে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হবারও সুযোগ নেই। ফলে নির্বাচনের সময় হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করতে কেহ উৎসাহিত হবেন না। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের আধুনিক সময়োপযোগী সংবিধানের জন্য এক বছরের মধ্যে এই ট্রাস্টে দুই শতাধিক ট্রাস্টি হয়েছেন। এটা শুধু গোলাপগঞ্জে নয়, ব্রিটেনে অন্য কোন সংগঠনে এত অল্প সময়ে এত ট্রাস্টি হয়েছেন সেই খবর আমাদের জানা নেই।

গোলাপগঞ্জ ট্রাস্টের সংবিধানে কি আছে –
গোলাপগঞ্জ ট্রাস্টের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য ২ বছর পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট সর্বোচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটি নির্বাচিত হবে। এই বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে কোন সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদকের পদ থাকবে না। এখানে সকলেই বোর্ড মেম্বার হিসেবে নির্বাচিত হয়ে সমান ক্ষমতা নিয়ে দায়িত্ব পালন করবেন। যারা বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে আসবে তারা সকলেই বোর্ড মেম্বার হিসেবে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করবেন। নির্বাচনে সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক হিসেবে প্রার্থী হবার সুযোগ না থাকায় নির্বাচনে তোড়জোড়, লবিং করার সুযোগ নেই। প্রতিটি ইউনিয়নের ট্রাস্টিরা তাদের নিজ ইউনিয়নের জন্য ৩ জন প্রতিনিধি (বোর্ড মেম্বার) নির্বাচিত করবে। যেমন ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ট্রাস্টিরা শুধু ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের বোর্ড মেম্বারদের ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত করবে। ফলে ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের ট্রাস্টিরা পৌরসভা কিংবা অন্য কোন ইউনিয়নের প্রতিনিধিকে ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে না। এছাড়া আলাপ আলোচনার মাধ্যমেও নিজ ইউনিয়ন/পৌরসভার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারবে।
প্রশ্নঃ বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট এর কাজ কি?
উত্তরঃ ৩৬ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটি ২৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি ইসি কমিটি গঠন করবে। এছাড়া কো-অপ্ট করে প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের মধ্য থেকে ৩ জন এবং মহিলা সদস্যদের মধ্য থেকে ২জন সদস্যকে বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করবে। এ বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটি যে কোন সময় প্রয়োজনে এই ইসি কমিটিকে রদবদল করতে পারবে। এছাড়াও নিন্মের দায়িত্ব পালন করবে। যেমন,
- নির্বাচন কমিশন গঠন করবে।
- উপদেষ্টা কমিটি গঠন করবে।
- বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সদস্যকে কো-অপ্ট কিংবা বিভিন্ন সাব-কমিটি গঠন করবে।
- সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে সাধারণ সভায় অনুমোদনের পূর্বে বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের অনুমোদন লাগবে।
- ট্রাস্টের আয়-ব্যয় তদারকি করবে।
নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভায় সভাপতিত্ব এবং জেনারেল সেক্রেটারি সভা পরিচালনা করবেন।
নির্বাচন আসলে দেখা যায় সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নির্বাচনী সভা, প্যানেল পরিচিতি সভার মাধ্যমে হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করেন। দুটি গ্রুপের মধ্যে এই প্রতিযোগিতায় গোলাপগঞ্জের কমিউনিটি দুটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের সংবিধানে নির্বাচন প্যানেল পরিচিতিমূলক অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। এর প্রধান কারণ হল, নির্বাচনে সকলেই বোর্ড মেম্বার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন। কোন প্রার্থী প্রকাশ্যে কোন নির্বাচনী সভা করলে নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থীতা বাতিল করবে। এতে অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, যারা প্রার্থী হবেন সাধারণ ট্রাস্টিদের কাছে তাদের বার্তা পৌঁছাবে কিভাবে? এর সহজ সরল জবাব হচ্ছে, নির্বাচন কমিশন নিজ উদ্যোগ সকল প্রার্থীদের পরিচিতি দিয়ে একটি প্রচারপত্র প্রকাশ করবে। ট্রাস্টের ওয়েবসাইট এবং অফিসিয়াল ফেইসবুক পেইজেও তা তুলে ধরা হবে। এবং নির্বাচনের ১০ দিন পূর্বে সকল প্রার্থীদের নিয়ে প্রার্থী পরিচিতি সভার আয়োজন করবে। ঐ সভায় সকল প্রার্থী নির্দিষ্ট সময়ের বক্তব্যে তাদের নিজস্ব পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারবে।
এছাড়া ট্রাস্টে চেয়ারম্যান এক টার্ম দায়িত্ব পালনের পর তিনি আর পুনরায় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। সাধারণ সম্পাদক সর্বোচচ দুই টার্ম দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।
সুতরাং, এখনই সময় এসেছে গোলাপগঞ্জ উপজেলার অন্যান্য সংগঠন গুলো তাদের সংবিধান সংশোধন মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ কমিউনিটিকে দ্বিধাবিভক্ত নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত করা।
আনোয়ার শাহজাহান
সাধারণ সম্পাদক গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট (ইউকে)।
ও
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক সহ-সভাপতি
গোলাপগঞ্জ হেলপিং হেন্ডস (ইউকে)
২০ মার্চ ২০১৯ ইংরেজি।
