গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি সামাজিক সংগঠন

মাহমুদুর রহমান শানুরঃ
সামাজিক সংগঠন করার প্রধান কারণ হচ্ছে ‘তারুণ্য’। আমাদের তারুণ্যের সময়টা আমরা কাজের মধ্য দিয়েই পার করি। একটু খেয়াল করলে দেখবেন, কাজ কিন্তু ২৪ ঘণ্টা হয় না। কাজের বাইরে আমরা অনেক সময় অবসরে কাটিয়ে দিই। আমরা চাইলেই বিনোদনের মাধ্যমে সেই সময়কে তারুণ্যের শক্তিতে রূপান্তর করতে পারি। সময়টা যদি আমরা সমাজের জন্য ব্যয় করতে পারি, তাহলে আমাদের কোনো ক্ষতি হচ্ছে না, বরং লাভ হচ্ছে। কারণ, সমাজের উন্নয়ন মানে আমাদের উন্নয়ন। এ সমাজের সামান্য উন্নয়ন হলে তা আমাদের কল্যাণেই আসবে। তাই আমাদের কল্যাণে তারুণ্যের অবসর সময়টা সমাজের তরে কাজ করতে পারি।

দেশপ্রেম ইমানের অঙ্গ। দেশপ্রেম মানে দেশের কল্যাণে কাজ করা। আমরা চাইলে একা একা অনেক কিছু করতে পারি। কথায় আছে ‘দশের লাঠি একের বোঝা’। দশের একাত্মতা মানে সংগঠিত হওয়া, সংগঠনের আওতায় আসা। একটি সংগঠনের কর্মী হয়ে আমরা চাইলেই আমাদের ওপর দেশের অধিকারটুকু পালন করতে পারি। তাই আমাদের সমাজের কল্যাণের জন্যই আমরা ‘গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট’ গঠন করেছি।

মানুষ সামাজিক জীব। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে জ্ঞান ও বুদ্ধি। এ দুটির কারণেই আমরা সৃষ্টির সেরা জীব। আমরা যেখানে বসবাস করছি সেই পরিবেশ রক্ষা করা আমাদের মৌলিক দায়িত্ব। সেই পরিবেশের জন্য আমাদের নিরলসভাবে কাজ করতে হবে। কারণ, আমাদের বিবেক আছে। বিবেক না থাকলে অন্য প্রাণীর মতো যা ইচ্ছে তা-ই করতে পারতাম আমরা, যেমন ইচ্ছে তেমন পরিবেশের ক্ষতি করতে পারতাম। কিন্তু বিবেক আছে বলেই এ পরিবেশের ক্ষতি করতে পারি না। এ পরিবেশ আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই রক্ষা করতে হবে। চাইলেও পরিবেশ একা একা রক্ষা করা যায় না। তার জন্য সমষ্টিগত উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এসব উদ্যোগই গ্রহণ করে থাকে সামাজিক সংগঠনগুলো। তাই আমরা গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের মাধ্যমে আমাদের সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলেছি।

বর্তমান তরুণ সমাজের একটি অংশ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের সাথে সম্পৃক্ত। এদের রক্ষা করতে হবে। যখন একটি সংগঠনের মাধ্যমে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কথা বলবেন, তখন এই অপরাধের সাথে আমাদের প্রজন্ম সম্পৃক্ত হতে পারবে না। কারণ, আপনার বিবেক আপনাকে বাধা দেবে। তাই এ রকম প্ল্যাটফর্ম তৈরির জন্য আপনাকে সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে আসতেই হবে।
আপনি যখন সংগঠনের হয়ে আপনার মতো আরো শত শত লোকের সাথে কাজ করবেন, তখন সেখান থেকে অনেক দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন। কারণ, একেকজনের মেধা একেক রকম। সংগঠনের সবার মেধার বিনিময়ে কাজ পরিচালিত হয়। তাই শ্রেষ্ঠ কাজটি আপনিই করবেন।

সামাজিক ব্যাধি নির্মূলে সামাজিক সংগঠনগুলো এগিয়ে আসে। ভৌগোলিক ও আর্থসামাজিক কারণে সমাজে বিভিন্ন ব্যাধি রয়েছে। মদ, জুয়া, মাদকদ্রব্য, নারী নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস ইত্যাদির বিরুদ্ধে সামাজিক সংগঠনগুলো অবস্থান নিতে পারে। আমার বিশ্বাস, আলোচনা সভা, সেমিনার, লিফলেট ইত্যাদি বিতরণের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সামাজিক সংগঠন থেকে ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে উপকৃত হতে পারে। কেউ যদি তার নিজের জন্য, পরিবেশের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করতে চায়, তবে সে সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে করতে পারবে। এতে সমাজ উপকৃত হবে।

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে মানুষের বসবাস করা উচিত। আর তারই ধারাবাহিকতায় গোলাপগঞ্জে বেশ কয়েকটি সামাজিক সংগঠন গড়ে উঠেছে। যেমন : গোলাপগঞ্জ উপজেলা এডুকেশন ট্রাস্ট, গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যান্ডস, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইত্যাদি। এছাড়াও গোলাপগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রাম পর্যায়ে বেশ কিছু সংগঠন রয়েছে। সব কটিই সামাজিক সংগঠন আর্তপীড়িত দুস্থ মানুষের প্রতি বিভিন্ন সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমধর্মী একটি সামাজিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এর কারণ হচ্ছে, বর্তমান বিলাতে তৃতীয়-চতুর্থ প্রজন্মের বসবাস। এই প্রজন্মের সামনে গোলাপগঞ্জের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি তুলে ধরে এদের সাথে সেতুবন্ধ তৈরি করার জন্য এই প্রয়াস। গোলাপগঞ্জের এই প্রজন্মের সন্তানেরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিলাতে অবদান রেখে চলেছে। তাদের নিয়েই আমাদের চিন্তাভাবনা। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের কাজ হবে তাদের মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করা আর কিছু বিপথগামী তরুণকে নিয়ে কাজ করা।

আমরা এখন বিলাতের স্থায়ী বাসিন্দা। আমাদের সন্তানেরা অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, চিকিৎসা ও আইন সেবায় নিয়োজিত। প্রায় প্রতিটি শাখায় তারা অবদান রেখে চলেছে।

আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, আমাদের স্বাধীনতা এবং দেশের কল্যাণে গোলাপগঞ্জের প্রবাসীদের অবদান অনস্বীকার্য। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের মাধ্যমে এই অবদানের মূল্যায়ন করতে হবে। এ জন্যই সোশ্যাল ট্রাস্ট অবশ্যই ভূমিকা রাখবে।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের মাধ্যমে আমাদের প্রজন্মকে আকৃষ্ট করার জন্য প্রত্যেক মা-বাবাকে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের সন্তানেরা বিলাতের অর্থনীতির বড় একটি চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রত্যেক অভিভাবক যেন নিজের সন্তানদের জন্য সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারেন, সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট।

প্রবাসীরা রুটি-রুজির জন্য হাজার হাজার মাইল দূরে থাকলেও তাঁদের মন থাকে দেশের মাটিতে। তাঁদের সন্তান-সন্ততির মধ্যে সুসম্পর্ক তৈরি করার আপ্রাণ চেষ্টা দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশেও ভূমিকা পালন করবে।

বাঙালিরা সাহসী, সংগ্রামী, জুলুমের প্রতিবাদী ও বীরের জাতি। যুগে যুগে তা প্রমাণিত হয়েছে। সবশেষে ১৯৭১ সালে ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে গোলাপগঞ্জের সন্তানেরা বীরত্বের প্রমাণ দিয়েছেন। সাত সমুদ্র তেরো নদী পাড়ি দিয়ে বীরত্বের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করেছেন আমাদের এই গোলাপগঞ্জের কৃতীসন্তানেরা।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে পথচলা শুরু করেছে আর যাঁরা শুরুতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা হলেন সোশ্যাল ট্রাস্টের সাবেক আহ্বায়ক ড. রেনু লুৎফা ও সদস্য সচিব আনোয়ার শাহজাহান, তৎকালীন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ড. আব্দুল আজিজ তকি এবং রুহুল আমিন রুহেল প্রমুখ। ট্রাস্টের প্রথম নির্বাহী কমিটি গঠনের পর অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে বর্তমানে যাঁরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের মধ্যে অন্যতম ট্রাস্টের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত, জেনারেল সেক্রেটারি আনোয়ার শাহজাহান, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল আমিন রুহেল, ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহির হোসেন গৌছ, ট্রেজারার বদরুল আলম বাবুলসহ অনেকেই। আমি এই ট্রাস্টের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।

———————————————–

মাহমুদুর রহমান শানুরঃ
গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের সাবেক আহ্বায়ক কমিটির সদস্য। গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি। বর্তমানে ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থার সহসভাপতি। বাড়ি ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়নের কানিশাইল গ্রামে।

লেখাটি প্রথম গোলাপগঞ্জ উৎসব ২০১৯ উপলক্ষে প্রকাশিত গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের স্মারকগ্রন্থ ‘প্রজন্মের সেতু’ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকাল জুলাই ২০১৯।