বিলাতের সব প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করবে গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট

সৈয়দ নাদির আহমদ
প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউকে

মানুষ সামাজিক জীব। এ জন্যই সমাজের প্রতি আমাদের রয়েছে অনেক দায়বদ্ধতা। আর এ দায়বদ্ধতা থেকেই মূলত সামাজিক সংগঠনের সৃষ্টি। এসব সংগঠনের মাধ্যমে আমরা সমাজকে বদলে দিতে পারি; পারি একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। এর মাধ্যমে দেশ ও জাতিকে উন্নত ও সমৃদ্ধিশালী করে গড়ে তোলা সম্ভব।

এক কোটির অধিক বাংলাদেশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাস জীবন যাপন করছেন। তাঁরা তাঁদের কষ্টার্জিত আয়ের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের উন্নয়নে যেমন রাখছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা, তেমনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে অনেক উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। এসব প্রবাসী যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়াসহ সারা বিশ্বে অনেক বাংলাদেশি সংগঠন তৈরির মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন এমনকি গ্রাম ও পাড়াভিত্তিক সংগঠনও বিদেশে রয়েছে।

 

বিলাতে গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রবাসীদের অনেক সংগঠন রয়েছে। সেগুলো এ পর্যন্ত এলাকার রাস্তাঘাট, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজের উন্নয়নসহ দরিদ্র মানুষের গৃহ নির্মাণ, আর্থিক সহযোগিতা, চিকিৎসা, হাসপাতাল নির্মাণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু এত কিছুর মাঝেও যেন আমরা প্রবাসীরা কিছু একটা অভাব বোধ করছি। বর্তমানে বিলাতে আমরা চার প্রজন্ম বসবাস করছি। পঞ্চম প্রজন্মও বেড়ে ওঠা শুরু করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের এত বেশি সংগঠন থাকা সত্ত্বেও বর্তমান প্রজন্ম কী পাচ্ছে। তারা কি আস্তে আস্তে ভুলে যেতে বসেছে যে তারা বাঙালি! সব সংগঠনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে নিজেদের এলাকার অর্থাৎ গ্রামের, পাড়া-মহল্লার তথা দেশের উন্নয়ন। কিন্তু তারা নিজেদের সন্তানদের জন্য কি কিছু করছে? আমাদের সন্তানেরা আমাদের কাছ থেকে কী পাচ্ছে। এটি বর্তমানে সময়ের দাবি। আমরা সবাই চাই, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ আমাদের সন্তানেরা একটি সুখী ও সমৃদ্ধিশালী জীবন গঠন করুক এবং তাদের ভবিষ্যৎ হোক খুব সুন্দর, সুখের ও আনন্দের।

 

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট আমাদের এই অভাব পূরণ করতে চলেছে বলে আমি মনে করি। এর মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে বিলাতে বসবাসরত আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম; সেই সাথে আমাদের গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে কাজ করা। ২০১৭ সালের শেষের দিকে লেখক-সাংবাদিক আনোয়ার শাহজাহান ফোন করে একটি নতুন সংগঠন তৈরির চিন্তাভাবনা করছেন বলে জানালেন। তখন আমি তাঁকে বলেছিলাম যে গোলাপগঞ্জের তো অনেক সংগঠন রয়েছে, নতুন করে আরেকটি সংগঠন করে লাভ কী। বর্তমানে সংগঠনগুলো যেমন সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তেমনি প্রায় প্রতিটি সংগঠনেই রয়েছে নেতৃত্বের কোন্দল, যা গোলাপগঞ্জের ঐতিহ্যকে বিনষ্ট করছে। তখন তিনি বলেছিলেন, “এ সংগঠনের লক্ষ্য ভিন্ন। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত প্রবাসীদের জন্য কিছু একটা করা এবং নতুন প্রজন্মকে বাংলাদেশের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া।”

 

আমিও অপেক্ষায় রইলাম। ২০১৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর আনোয়ার শাহজাহানের আহ্বানে লন্ডনে একটি সভা অনুষ্ঠিত হলো। গঠিত হলো আহ্বায়ক কমিটি। ড. রেণু লুৎফা, তছউর আলী, ড. আব্দুল আজিজ তকি, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আমান উদ্দিন, রুহুল আমিন রুহেল, মাহমুদুর রহমান শানুর, মোহাম্মদ আব্দুল বাছিত, আনোয়ার শাহজাহানসহ গোলাপগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ অনেক ব্যক্তি আহ্বায়ক কমিটিতে স্থান পেলেন। এর পরের সভায় ড. আব্দুল আজিজ তকি ও আনোয়ার শাহজাহান একটি খসড়া সংবিধান উপস্থাপন করলেন। সেটি পড়ে অনেকটা আশ্বস্ত হলাম। কারণ, সংবিধান অনুযায়ী এখানে নেতৃত্বের কোন্দল সৃষ্টি হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এখানে সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাহী পরিষদ নির্বাচিত হবেন না। ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা থেকে ৩ জন করে মোট ৩৬ জন সদস্য বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টে থাকবেন এবং এই বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। তারাই ইসি কমিটি গঠন করবে। ইউনিয়নের সদস্যরা ভোটের মাধ্যমে তাঁদের নিজ নিজ ইউনিয়ন থেকে ৩ জন প্রতিনিধি নির্বাচন করে বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টে পাঠাবেন।

 

গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট এ পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে প্যারেন্টসদের মধ্যে ট্রেনিংয়ের আয়োজন।

 

এ পর্যন্ত তিনটি গ্রুপ এ ট্রাস্টের মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, সুপ্রিম কোর্ট সফর করেছে। ট্রাস্টের সদস্যরাও তাঁদের পরিবার নিয়ে পিকনিক ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এ ছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার ইউনিয়নভিত্তিক ফুটবল টুর্নামেন্ট, গোলাপগঞ্জ উৎসব এবং সবচেয়ে বড় ও যুগান্তকারী পদক্ষেপ হচ্ছে গোলাপগঞ্জ ভবন নামে একটি বিল্ডিং ক্রয়ের সিদ্ধান্ত, যা এ পর্যন্ত কোনো সংগঠনই বিলাতে করতে পারেনি।

সর্বোপরি আমি আশাবাদী, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ভবিষ্যতে বিলাতে বসবাসরত গোলাপগঞ্জবাসীর উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করবে এবং দল-মতনির্বিশেষে গোলাপগঞ্জবাসীকে একই প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসতে পারবে।

 

।।

সৈয়দ নাদির আহমদ:  বাংলাদেশ প্রেসক্লাব ফাউন্ডেশনের সাবেক সভাপতি এবং গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বৃহত্তর ভাদেশ্বর উন্নয়ন সমিতির সভাপতি। গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের বোর্ড অব ম্যানেজমেন্ট ও ইসি কমিটির সদস্য। বাড়ি লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের দক্ষিণভাগ গ্রামে।

 

 

#লেখাটি প্রথম গোলাপগঞ্জ উৎসব ২০১৯ উপলক্ষে প্রকাশিত গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্টের স্মারকগ্রন্থ ‘প্রজন্মের সেতু’ থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকাশকাল জুলাই ২০১৯।